Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস (সংক্ষিপ্ত)

মূলতঃ ইতিহাস সবসময় ইতিহাসই। সেটাকে নতুন করে রঙ লাগিয়ে পরিবর্তন করা যায় না। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেই কম বেশী জানি। তবুও স্মৃতীটাকে মাঝে মাঝে উকি দিয়ে না দেখলে সেও একসময় ইতিহাস হয়ে যায়। আজও সেরকম একটা বিষয়কে উকি দিয়ে দেখতেই এই লেখার আগ্রহ। ঠিক বাংলাদেশ বললে ভুল হবে। আদি ভূমির ইতিহাস থেকে আমরা বর্তমান বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত খুব সংক্ষেপে আলোকপাত করবো আজ। আসুন জেনে নেই বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস অতি প্রাচীন। এই ইতিহাসকে বিভিন্ন আমলে ভাগ করা হয়। আদি যুগ, হিন্দু বা বৌদ্ধ শাসনামল, মুঘল, পাঠান ও সুলতানী আমল ইত্যাদি। মূলত শেরশাহের শাসনামলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়।

আদিযুগে সর্ব প্রথম ভূমির ব্যবহার শুরু হয়। আদিবাসি তথা হাজং, মুরং, কুকি, খাসিয়া, সাঁওতাল ইত্যাদি সম্প্রদায় খাদ্য চাহিদা মিটানোর তাগিদে বনজঙ্গল পরিস্কার করে চাষাবাদ করত এবং সেখানে দল বেধেঁ বসবাস করত। বসবাসের এই স্থানকে ‘‘পাড়া ’’ বলা হতো এবং পাড়ার প্রধানকে সরদার বা মুন্ডা বলা হতো। মুন্ডারা দলীয় সদস্যদের মধ্যে জমি বন্টন করে দিতেন এবং উৎপাদিত ফসলের কিছু অংশ মুন্ডাকে উপহার দেয়া হতো। প্রথমদিকে হিন্দু শাসনামলে এদেশে পরিবার ভিত্তিক যৌথ সমাজ ব্যবস্থা ছিল। তখন যে ব্যক্তি বা পরিবার জঙ্গল পরিস্কার করে জমি চাষবাদ করত তারা ভূমি দখলকার মালিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতেন। চাষী উৎপাদিত ফসলের সিংহভাগ ভোগ করত। রাজ্যের যিনি প্রধান থাকতেন তিনি মোট ফসলের একটা অংশ কর হিসেবে পেতেন।

সম্রাট শেরশাহের শাসনামলে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও যুগোপযোগী করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় যারা জঙ্গল পরিস্কার করে চাষাবাদের উপযোগী ভূমি তৈরী করতেন। তাদেরকে প্রজা স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে পাট্টা বা কবুলিয়ত পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। পাট্টা হল কোন ব্যক্তির জমি ভোগদখলের অধিকার পত্র। পাট্টার শর্তগুলো প্রজা মেনে নিয়ে যে সম্মতি পত্র দিতেন তাই কবুলিয়ত। পাট্টা ও কবুলিয়তের ভিত্তিতে চাষীরা জমির মালিকানা ও দখল প্রমাণের সুযোগ পায়। এ আমলে জমি জরিপের জন্য কানুনগো নিয়োগ দেওয়া হয়।

১৭৬৫ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দিল্লির সম্রাটের নিকট হতে বাংলা, বিহার ও উরিষ্যার দেওয়ানী লাভ করেন। ছিয়াত্তরের মনমত্মরের কারণে রাজস্ব আদায় না হওয়ায় সর্ব প্রথম ১৭৬৯ সালে একজন ইংরেজ রেভিনিউ সুপার ভাইজার নিয়োগ করা হয়। এরপর ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস ভূমি রাজস্ব আদায় ও ব্যবস্থাপনার জন্য সুপারভাইজারের স্থলে রেভিনিউ কালেক্টর নিয়োগ দেন। তিনি এ সময় ০৫ (পাঁচ) বছর মেযাদী পাঁচসালা বন্দোবসত্ম চালূ করেন। এতে নীলামকারীর অনুকূলে জমির বন্দোবসেত্মর ব্যবস্থা করা হয়। ফলে অনেকেই জমিদারী হারান। তবে এ ব্যবস্থা রাজস্ব আদায়ে সহায়ক না হওয়ায় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭৭৭ সালে একবছর মেয়াদী সর্বোচ্চ নীলামকারীর অনুকূলে জমি বন্দোবসত্ম দেওয়ার প্রথা চালু করেন। এরপর ১৭৯০ সাল দশসালা বন্দোবসত্ম প্রথা প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু এ প্রথাও রাজস্ব আদায়ে সফলতার মুখ দেখেনি।

১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবসত্ম প্রথাচালূ করে প্রজাদের মালিকানা স্বত্ত্ব কেড়ে নেন। জমিদারগণকে দেওয়া হয় জমির মালিকানা স্বত্ত্ব। প্রজা জমি চাষ করে, জমিদারগণ খাজনা নিয়ে ইংরেজদের হাতে তুলে দেয়। এতে সরকারের সাথে প্রজার সম্পর্ক নষ্ট হলেও জমিদারের সাথে সরকারের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এক্ষেত্রে জমিদারগণ মধ্যস্বত্ত্ব ভোগের সুযোগ পান।

এরপর অনেকদিন পার হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিসত্মান বিভক্ত হয়ে দুটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন নামক যুগামত্মকারী আইনটি পাশ হয়। এ আইনের বলে জমিদারগণ জমিদারী হারান এবং প্রজাগন জমির মালিকানা স্বত্ত্ব লাভ করেন।